বিশ্ব সভ্যতা

বিশ্ব সভ্যতা বলতে কী বোঝায়?

বিশ্ব সভ্যতা বলতে মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিকাশকে বোঝায়, যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে বিস্তার লাভ করে এবং মানব সমাজের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানের বা কালের সংস্কৃতি নয়, বরং মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবন এবং ঐতিহ্যের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

মেসোপটেমীয় সভ্যতা

মেসোপটেমীয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। “মেসোপটেমিয়া” শব্দটি গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি”। “মেসোপটেমিয়া” শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ থেকে—

  • “Mesos” অর্থ ‘মধ্যবর্তী’
  • “Potamos” অর্থ ‘নদী’

এই দুটি নদী হলো টাইগ্রিস (দজলা)ইউফ্রেটিস (ফোরাত)। বর্তমান ইরাক, সিরিয়া এবং তুরস্কের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত উর্বর অর্ধচন্দ্রাকৃতির ভূমিই ছিল মেসোপটেমিয়ার কেন্দ্রস্থল। এর নামের অর্থই — “নদীর মাঝের ভূমি” বা Land Between Two Rivers।  খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ থেকে ৫০০ অব্দ পর্যন্ত এই সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। এটি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩৫০০ বছর আগে সুমেরীয়দের দ্বারা শুরু হয় এবং একে বলা হয় “সভ্যতার সূতিকাগার”।

মেসোপটেমীয় সভ্যতা কোনো একক সভ্যতা ছিল না, বরং এটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র সভ্যতার সমষ্টি ছিল, যা বিভিন্ন সময়ে মেসোপটেমিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল।

মেসোপটেমীয় সভ্যতার চারটি প্রধান পর্যায়:
(ক)সুমেরীয় সভ্যতা: 

সুমেরীয় সভ্যতা (আনু. ৩৫০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। বিশ্বের প্রথম নগর সভ্যতা হিসেবে পরিচিত। কিউনিফর্ম লিপির উদ্ভাবন, জিগুরাতের মতো বিশাল মন্দির নির্মাণ, চাকার আবিষ্কার এবং প্রথম আইন সংকলনের ধারণা, চন্দ্রপঞ্জিকা, গণিতের ব্যবহার  ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি তাদের অবদান  ।

আক্কাদীয় সভ্যতা (আনু. ২৩৫০-২১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): সুমেরীয় নগর-রাষ্ট্রগুলো যখন নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল, তখন সারগন অফ আক্কাদ (Sargon of Akkad) নামক এক শক্তিশালী শাসক সেমেটিকভাষী আক্কাদীয়দের একত্রিত করে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

  • বিশেষত্ব:
    • প্রথম সাম্রাজ্য: সারগনকে বিশ্বের প্রথম সাম্রাজ্য স্থাপনকারী হিসেবে ধরা হয়, যা সুমেরীয় নগর-রাষ্ট্রগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে।
    • ভাষার পরিবর্তন: সুমেরীয় ভাষার পাশাপাশি সেমেটিক আক্কাদীয় ভাষা প্রাধান্য পেতে শুরু করে।
    • আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং গুতিয়ানদের (Gutians) আক্রমণের ফলে।

 

(খ)  প্রাচীন বাবিলনীয় সভ্যতা (খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ – ১৫৯৫)

আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর মেসোপটেমিয়ার নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন জাতির হাতে আসে। শেষ পর্যন্ত আমোরাইট (Amorite) জাতি বাবিলন শহরকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।

প্রাচীন বাবিলনীয় সভ্যতা:

  • হাম্মুরাবি: এই সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিলেন হাম্মুরাবি (আনু. ১৭৯২-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক এবং আইনজ্ঞ।
  • হাম্মুরাবির আইন সংহিতা (Code of Hammurabi): এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ও সুসংগঠিত লিখিত আইন সংহিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম । প্রায় ২৮২টি আইনের সমন্বয়ে গঠিত এই সংহিতা ‘চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত’ নীতির (Lex Talionis) উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল । এটি একটি বিশাল পাথরের স্তম্ভে খোদাই করা ছিল ।
  • ব্যাবিলন নগরীর রাজধানী বাবিলন (Babylon)  মেসোপটেমিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগরী এবং সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ।
(গ) অ্যাসিরীয় সভ্যতা:

অ্যাসিরীয় সভ্যতা (আনু. ১৩৫০-৬১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে টাইগ্রিস নদীর তীরে অ্যাসিরীয়রা তাদের সভ্যতা গড়ে তোলে। তারা ছিল অত্যন্ত যুদ্ধপ্রিয় এবং সামরিক শক্তিতে বলীয়ান জাতি ।

 বিশেষত্ব:

  • সামরিক শক্তি: লৌহ যুগের শুরুতে তারা লোহার অস্ত্রশস্ত্র ও রথ ব্যবহার করে এক বিশাল ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তোলে।
  • বিশাল সাম্রাজ্য: তারা মেসোপটেমিয়ার বিরাট অংশ, মিশর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ দখল করে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
  • আশুরবানিপাল: অ্যাসিরীয়দের একজন বিখ্যাত রাজা ছিলেন আশুরবানিপাল, যিনি নিনেভেতে (Nineveh) একটি বিশাল গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন, যেখানে হাজার হাজার কিউনিফর্ম ফলক সংরক্ষিত ছিল।
  • নির্মমতা: অ্যাসিরীয়রা তাদের বিজিত অঞ্চলে অত্যন্ত নির্মম শাসন পরিচালনা করত, যা তাদের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। তাদের পতনের পর নব্য বাবিলনীয় সাম্রাজ্য (ক্যালডীয়) ক্ষমতা লাভ করে । বিশেষ অবদান ছিল যুদ্ধশিল্প, রাজকীয় গ্রন্থাগার ।
(ঘ) নব্য বাবিলনীয় সভ্যতা বা ক্যালডীয় সভ্যতা : 

নব্য বাবিলনীয় সভ্যতা বা ক্যালডীয় সভ্যতা (৬২৬-৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ):

  • অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর ক্যালডীয়রা (একটি সেমেটিক জাতিগোষ্ঠী) বাবিলনে তাদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, যা নব্য বাবিলনীয় সভ্যতা নামে পরিচিত । নবোপলাসার এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন ।
  • নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়: এই সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিলেন নেবুচাদনেজার দ্বিতীয় (Nebuchadnezzar II)।
  • ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান (Hanging Gardens of Babylon): বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের একটি হিসেবে পরিচিত এই বাগান নেবুচাদনেজার তার স্ত্রীর জন্য নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয় ।
  • ইশতার গেট (Ishtar Gate): বাবিলনের বিখ্যাত প্রবেশদ্বার, যা ছিল তার স্থাপত্য শিল্পের এক অনবদ্য নিদর্শন ।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞান: ক্যালডীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে এবং গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করে ।
  • বিশেষ অবদান: ঝুলন্ত উদ্যান, নগর উন্নয়ন ।

সারাংশ টেবিল:

পর্যায় সময়কাল রাজধানী বিশেষ অবদান
সুমেরীয় খ্রি.পূ. ৩৫০০–২০০০ উর, উরুক কিউনিফর্ম, জিগুরাট
বাবিলনীয় খ্রি.পূ. ২০০০–১৫৯৫ বাবিলন হাম্মুরাবির বিধান
অ্যাসিরীয় খ্রি.পূ. ১৩৫০–৬০৯ নিনেভে যুদ্ধ, গ্রন্থাগার
ক্যালডীয় খ্রি.পূ. ৬২৬–৫৩৯ বাবিলন ঝুলন্ত উদ্যান
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) উত্তরসহ:

১. কোন সভ্যতা সর্বপ্রথম কিউনিফর্ম লিপি আবিষ্কার করে?
A. বাবিলনীয়
B. সুমেরীয়
C. অ্যাসিরীয়
D. ক্যালডীয়
সঠিক উত্তর: B

২. হাম্মুরাবির বিধান কোন সভ্যতার অবদান?
A. অ্যাসিরীয়
B. ক্যালডীয়
C. সুমেরীয়
D. বাবিলনীয়
সঠিক উত্তর: D

৩. ঝুলন্ত উদ্যান কার শাসনামলে নির্মিত হয়?
A. আশুরবানিপাল
B. হাম্মুরাবি
C. নেবুচাদনেজার
D. গিলগামেশ
সঠিক উত্তর: C

৪. নিচের কোন সভ্যতাকে যুদ্ধবাজ ও নির্মম হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
A. বাবিলনীয়
B. অ্যাসিরীয়
C. সুমেরীয়
D. ক্যালডীয়
সঠিক উত্তর: B

৫. প্রাচীন গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য কোন রাজা বিখ্যাত ছিলেন?
A. নেবুচাদনেজার
B. আশুরবানিপাল
C. হাম্মুরাবি
D. গিলগামেশ
সঠিক উত্তর: B

৬. মেসোপটেমীয় সভ্যতার প্রাচীন শহর কোনটি ছিল?
A. থিবস
B. উর
C. হরপ্পা
D. পিকিন
সঠিক উত্তর: B

৭. মেসোপটেমীয় সভ্যতার প্রধান অবদান কোনটি?
A. পিরামিড
B. লিপি আবিষ্কার (কিউনিফর্ম)
C. কাগজ
D. রেশম তৈরি
সঠিক উত্তর: B

৮. বিশ্ব সভ্যতা বলতে কী বোঝায়?
A. একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা
B. বিশ্বের শিল্পকলার ইতিহাস
C. মানুষের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
D. শুধুমাত্র প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা
সঠিক উত্তর: C

৯. মেসোপটেমীয় সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?
A. নীলনদের তীরে
B. সিন্ধু নদীর তীরে
C. টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মাঝে
D. ইয়াংজি নদীর তীরে
সঠিক উত্তর: C

১০. কোন সভ্যতাকে “সভ্যতার সূতিকাগার” বলা হয়?
A. মিশরীয় সভ্যতা
B. সিন্ধু সভ্যতা
C. মেসোপটেমীয় সভ্যতা
D. চীনা সভ্যতা
সঠিক উত্তর: C

১১. মেসোপটেমীয় সভ্যতার কোন পর্যায়কে প্রথম নগর সভ্যতা হিসেবে ধরা হয়?
ক) বাবিলনীয় সভ্যতা
খ) অ্যাসিরীয় সভ্যতা
গ) সুমেরীয় সভ্যতা
ঘ) ক্যালডীয় সভ্যতা
সঠিক উত্তর: গ) সুমেরীয় সভ্যতা

১২. বিশ্বের প্রথম সাম্রাজ্য কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
ক) হাম্মুরাবি
খ) নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়
গ) সারগন অফ আক্কাদ
ঘ) আশুরবানিপাল
সঠিক উত্তর: গ) সারগন অফ আক্কাদ

১৩. কিউনিফর্ম লিখন পদ্ধতি কোন সভ্যতার প্রধান অবদান?
ক) মিশরীয়
খ) সুমেরীয়
গ) অ্যাসিরীয়
ঘ) বাবিলনীয়
সঠিক উত্তর: খ) সুমেরীয়

১৪. হাম্মুরাবির আইন সংহিতা কোন সভ্যতার সাথে সম্পর্কিত?
ক) অ্যাসিরীয়
খ) সুমেরীয়
গ) ক্যালডীয়
ঘ) প্রাচীন বাবিলনীয়
সঠিক উত্তর: ঘ) প্রাচীন বাবিলনীয়

১৫. বাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান কোন শাসক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়?
ক) হাম্মুরাবি
খ) সারগন অফ আক্কাদ
গ) নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়
ঘ) আশুরবানিপাল
সঠিক উত্তর: গ) নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়

১৬. মেসোপটেমিয়ার কোন জাতি সামরিক শক্তিতে বিশেষ পারদর্শী ছিল এবং একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল?
ক) সুমেরীয়
খ) বাবিলনীয়
গ) অ্যাসিরীয়
ঘ) ক্যালডীয়
সঠিক উত্তর:  গ) অ্যাসিরীয়

১৭. নিনেভেতে বিশাল গ্রন্থাগার কে স্থাপন করেছিলেন?
ক) নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়
খ) হাম্মুরাবি
গ) আশুরবানিপাল
ঘ) সারগন অফ আক্কাদ
সঠিক উত্তর: গ) আশুরবানিপাল

১৮. মেসোপটেমীয়রা গণিত জ্যোতির্বিজ্ঞানে যে সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করত, সেটি কী নামে পরিচিত?
ক) দশ-ভিত্তিক
খ) শত-ভিত্তিক
গ) ষাট-ভিত্তিক
ঘ) দ্বাদশ-ভিত্তিক
সঠিক উত্তর: গ) ষাট-ভিত্তিক

১৯. জিগুরাত কোন সভ্যতার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন?
ক) মিশরীয়
খ) সিন্ধু
গ) সুমেরীয়
ঘ) চৈনিক
সঠিক উত্তর: গ) সুমেরীয়

২০. ক্যালডীয় সভ্যতা মূলত কোন সভ্যতার পুনরুত্থান ছিল?
ক) সুমেরীয়
খ) আক্কাদীয়
গ) বাবিলনীয়
ঘ) অ্যাসিরীয়
সঠিক উত্তর: গ) বাবিলনীয়

 

মিশরীয় সভ্যতা:

মিশরীয় সভ্যতা মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নীল নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সভ্যতা প্রায় তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিল। এর স্থাপত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান এবং জীবনযাপন পদ্ধতি আজও আমাদের মুগ্ধ করে ।   মিশরীয় সভ্যতা উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে নীল নদের নিম্নভূমি অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। মিশর এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে লোহিত সাগর, পশ্চিমে সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে সুদান ও অন্যান্য আফ্রিকার দেশ অবস্থিত। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল ইজিপ্ট ।  এই সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে একটি সুসংহত রূপ লাভ করে। ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশরকে “নীল নদের দান” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ নীল নদ না থাকলে মিশরের উর্বরতা সম্ভব হতো না। প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় পলিমাটি জমে জমি উর্বর হতো, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল ।

মিশরের শাসনভার ছিল ফারাওদের হাতে। “পের-ও” শব্দ থেকে “ফারাও” শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ ছিল “ঈশ্বরের প্রতিনিধি”। ফারাওরা ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং নিজেদেরকে সূর্য দেবতার বংশধর মনে করতেন। ফারাও পদটি ছিল বংশানুক্রমিক। প্রথম ফারাও ছিলেন মেনেস বা নারমার।

কৃষি অর্থনীতির প্রয়োজনে তারা গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করত এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৪২০০ অব্দে ৩৬৫ দিনে বছর গণনার রীতি ও সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করে। সময় নির্ধারণের জন্য সূর্যঘড়ি, ছায়াঘড়ি ও জলঘড়ি আবিষ্কার করে। পাটিগণিত ও জ্যামিতির উদ্ভাবক ছিল মিশরীয়রা। তারা যোগ, বিয়োগ ও ভাগ পদ্ধতি জানত। পিরামিড নির্মাণে জ্যামিতিক জ্ঞান অপরিহার্য ছিল। তারা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ ও বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারতো। মিশরীয়রা চিকিৎসা বিজ্ঞানেও উন্নত ছিল। ইমহোটেপ ছিলেন একজন প্রখ্যাত মিশরীয় চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ ও স্থপতি।

মিশরীয়দের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। প্রথমে তারা ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করত, যার নাম ছিল চিত্রলিপি বা হায়রোগ্লিফিক। এরপর তারা প্যাপিরাস নামক এক ধরনের গাছের ছাল থেকে কাগজ তৈরি করত, যা লিখন পদ্ধতির প্রচলনে সাহায্য করে।

খ্রিস্টপূর্ব দশম শতকে লিবিয়ার বর্বর জাতি ফারাওদের সিংহাসন দখল করে নেয়। এরপর অ্যাসিরীয়, পারসিক, গ্রিক ও রোমানরা পর্যায়ক্রমে মিশর দখল করে। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫ অব্দে পারস্য সম্রাট সাইরাস মিশর দখল করে নিলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সূর্য অস্তমিত হয়।

মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে এমসিকিউ প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল?
ক) ইউফ্রেটিস 
খ) সিন্ধু 
গ) নীল (নাইল) 
ঘ) ইয়াংসি
সঠিক উত্তর: গ) নীল (নাইল)

২. মিশরের প্রথম ফারাও কে ছিলেন?
ক) তুতেনখামেন 
খ) আখেনাতেন 
গ) রামসেস দ্বিতীয় 
ঘ) মেনেস (নারমার)
সঠিক উত্তর: ঘ) মেনেস (নারমার)

৩. মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতির নাম কী?
ক) কিউনিফর্ম 
খ) হায়রোগ্লিফিক 
গ) চিত্রলিপি ঘ) খ ও গ উভয়ই
সঠিক উত্তর: ঘ) খ ও গ উভয়ই (হায়রোগ্লিফিক চিত্রলিপির একটি রূপ)

৪. মিশরীয়রা মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করত, তার নাম কী?
 ক) মমি 
খ) পিরামিড 
গ) স্ফিংস 
ঘ) ফারাও
সঠিক উত্তর: ক) মমি

৫. মিশরকে "নীল নদের দান" কে বলেছিলেন?
ক) পিথাগোরাস 
খ) হেরোডোটাস 
গ) মার্ক অ্যান্টনি 
ঘ) আলেকজান্ডার
সঠিক উত্তর: খ) হেরোডোটাস

৬. মিশরীয়রা কয় দিনে বছর গণনা করত?
ক) ৩৬০ দিন 
খ) ৩৬৫ দিন 
গ) ৩০০ দিন 
ঘ) ৩৬৪ দিন
সঠিক উত্তর: খ) ৩৬৫ দিন

৭. পিরামিড কোন সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন?
ক) মেসোপটেমীয় সভ্যতা 
খ) সিন্ধু সভ্যতা 
গ) মিশরীয় সভ্যতা 
ঘ) চীনা সভ্যতা
সঠিক উত্তর: গ) মিশরীয় সভ্যতা

. মিশরীয় রাজাদের কী বলা হতো?
(ক) বাদশাহ
(খ) সম্রাট
(গ) ফেরাউন
(ঘ) ক্যাসার
✅ উত্তর: () ফেরাউন

. মিশরীয় লিপিকে কী বলা হয়?
(ক) কিউনিফর্ম
(খ) হায়ারোগ্লিফিক
(গ) ব্রাহ্মী
(ঘ) গ্রীক
✅ উত্তর: () হায়ারোগ্লিফিক

১০. গিজার বিখ্যাত পিরামিডটি কার স্মৃতিতে নির্মিত?
(ক) তুতেনখামেন
(খ) খুফু
(গ) রামসেস
(ঘ) কেমেট
✅ উত্তর: () খুফু

১১. প্রাচীন মিশরীয়রা কোন বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিত?
(ক) গণতন্ত্র
(খ) শিল্পকলা
(গ) মৃত্যুর পরের জীবন
(ঘ) দাসব্যবস্থা
✅ উত্তর: () মৃত্যুর পরের জীবন

১২. প্রাচীন মিশরেস্ফিংসকী?
(ক) যুদ্ধের দেবতা
(খ) একটি মন্দির
(গ) সিংহের দেহ ও মানুষের মুখবিশিষ্ট মূর্তি
(ঘ) রাজপ্রাসাদ
✅ উত্তর: () সিংহের দেহ  মানুষের মুখবিশিষ্ট মূর্তি

১৩. ফেরাউনের মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ কীভাবে সংরক্ষণ করত?
(ক) কবর দেওয়া হতো
(খ) পুড়িয়ে ফেলা হতো
(গ) সংরক্ষণ করে মমি বানানো হতো
(ঘ) নদীতে ফেলে দেওয়া হতো
✅ উত্তর: () সংরক্ষণ করে মমি বানানো হতো

১৫. মিশরীয় সভ্যতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিকাশ কোথায় ঘটেছিল?
(ক) সুমেরীয় সভ্যতা
(খ) চীনা সভ্যতা
(গ) মিশরীয় সভ্যতা
(ঘ) ভারতীয় সভ্যতা
✅ উত্তর: () মিশরীয় সভ্যতা

হিব্রু সভ্যতা

হিব্রু সভ্যতা মূলত ইহুদি ধর্ম এবং সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। এটি সেমেটিক জনগোষ্ঠীর একটি শাখা দ্বারা বিকশিত হয়েছিল, যারা নিজেদেরকে “ইসরায়েল সন্তান” বলে পরিচয় দিত। এই সভ্যতার মূল কেন্দ্র ছিল বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অঞ্চল । ‘হিব্রু’ নামটি সম্ভবত ‘ইভরি’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘অন্য পাশ থেকে আগত’ বা ‘ভ্রমণকারী’। এর দ্বারা বোঝানো হয় যে, হিব্রুরা মেসোপটেমিয়া থেকে ক্যানন ভূমিতে এসেছিল । হিব্রুদের ইতিহাস বাইবেল (ওল্ড টেস্টামেন্ট) এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। বাইবেল অনুসারে, হিব্রুদের আদিপুরুষ ছিলেন আব্রাহাম (ইব্রাহিম), যিনি মেসোপটেমিয়ার উর শহর থেকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ক্যানন ভূমিতে এসে বসতি স্থাপন করেন। আব্রাহামের পৌত্র জ্যাকব (যাকুব) বা ইসরায়েলের ১২ জন পুত্র ছিল, যাদের বংশধররা ইসরায়েলের ১২টি গোত্র গঠন করে ।  খরা ও দুর্ভিক্ষের কারণে হিব্রুদের একটি অংশ মিশরে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং সেখানে প্রায় ৪০০ বছর দাসত্ব জীবনযাপন করেছিল। বাইবেল অনুসারে, মোশি (মূসা) ঈশ্বরের নির্দেশে হিব্রুদের মিশর থেকে মুক্ত করে সিনাই মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ‘প্রতিশ্রুত ভূমিতে’ (ক্যানন) ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এই ঘটনাটি ‘এক্সোডাস’ নামে পরিচিত এবং এর মাধ্যমেই হিব্রুদের মধ্যে ঐশ্বরিক আইন (দশ আজ্ঞা) এবং একত্ববাদের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

হিব্রু সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো একত্ববাদ বা একেশ্বরবাদ। তারা এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর ‘ইয়াহওয়েহ’ বা ‘যিহোবা’-তে বিশ্বাস করত। এই ধারণা অন্যান্য বহু-ঈশ্বরবাদী সভ্যতার থেকে তাদের স্বতন্ত্র করে তুলেছিল। দশ আজ্ঞা ছিল তাদের নৈতিক ও সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘তওরাহ’ বা ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আইন ও ইতিহাসের প্রধান উৎস।

হিব্রু সভ্যতা নিয়ে এমসিকিউ প্রশ্নপত্র (Quiz Sheet)
. হিব্রু সভ্যতার মূল কেন্দ্র কোন অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল?
ক) মেসোপটেমিয়া
খ) মিশর
গ) ক্যানন (বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন)
ঘ) পারস্য
সঠিক উত্তর: গ) ক্যানন (বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন)

. বাইবেল অনুসারে হিব্রুদের আদিপুরুষ কে ছিলেন?
ক) মোশি
খ) ডেভিড
গ) আব্রাহাম
ঘ) সলোমন
সঠিক উত্তর: গ) আব্রাহাম

. হিব্রুদের মিশর থেকে মুক্ত করে প্রতিশ্রুত ভূমিতে নিয়ে এসেছিলেন কে?
ক) আব্রাহাম
খ) মোশি
গ) ডেভিড
ঘ) সলোমন
সঠিক উত্তর: খ) মোশি

. হিব্রু সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান কোনটি?
ক) পিরামিড নির্মাণ
খ) বহু-ঈশ্বরবাদ
গ) একত্ববাদ
ঘ) হায়রোগ্লিফিক লিখন পদ্ধতি
সঠিক উত্তর: গ) একত্ববাদ

. হিব্রুদের আইন  নৈতিকতার মূল ভিত্তি কী ছিল?
ক) হাম্মুরাবির আইন সংহিতা
খ) মোশির দশ আজ্ঞা
গ) বৌদ্ধ ধর্মীয় নীতি
ঘ) কোরআন
সঠিক উত্তর: খ) মোশির দশ আজ্ঞা

. জেরুজালেমে প্রথম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন কোন হিব্রু রাজা?
ক) শৌল
খ) ডেভিড
গ) সলোমন
ঘ)স্যামুয়েল
সঠিক উত্তর: গ) সলোমন

. হিব্রু রাজ্য ইসরায়েল  জুদাহতে বিভক্ত হয়েছিল কোন রাজার মৃত্যুর পর?
ক) শৌল
খ) ডেভিড
গ) সলোমন
ঘ) মোশি
সঠিক উত্তর: গ) সলোমন

. কোন ঘটনাকে 'এক্সোডাস' নামে অভিহিত করা হয়?
ক) আব্রাহামের ক্যানন যাত্রা
খ) ডেভিডের গোলিয়াথকে হত্যা
গ) হিব্রুদের মিশর থেকে মুক্তিলাভ
ঘ) জেরুজালেমের মন্দির ধ্বংস
সঠিক উত্তর: গ) হিব্রুদের মিশর থেকে মুক্তিলাভ

. খ্রিস্টীয় ৭০ অব্দে রোমানরা ইহুদিদের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল, এই ঘটনাকে কী বলা হয়?
ক) এক্সোডাস
খ) ডায়াসপোরা
গ) বাবিলীয় বন্দিদশা
ঘ) ক্যানন যাত্রা
সঠিক উত্তর: খ) ডায়াসপোরা

১০. হিব্রুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোনটি?
ক) বেদ
খ) ত্রিপিটক
গ) কোরআন
ঘ) তওরাহ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)
সঠিক উত্তর: ঘ) তওরাহ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)

সিন্ধু সভ্যতা: একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন নগর সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতা, যা হরপ্পা সভ্যতা নামেও পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম নগর সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ১৯০০ অব্দের মধ্যে এর স্বর্ণযুগ ছিল। এটি মূলত সিন্ধু নদ ও তার উপনদীগুলোর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল, যা বর্তমান পাকিস্তান, ভারত এবং আফগানিস্তানের কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯২০-এর দশকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে এই সভ্যতার বিস্ময়কর অস্তিত্ব উন্মোচিত হয়, যার মধ্যে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো এবং লোথালের মতো শহরগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এই সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এর উন্নত নগর পরিকল্পনা। প্রতিটি শহরে সুবিন্যস্ত রাস্তা, পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা, শস্যভাণ্ডার এবং পাবলিক বাথ (যেমন মহেঞ্জোদারোর বিশাল স্নানাগার) ছিল। বাড়িঘরগুলো সাধারণত পোড়া ইটের তৈরি ছিল, যা তাদের স্থায়িত্ব নির্দেশ করে। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা কৃষিকাজে পারদর্শী ছিল; গম, যব, কার্পাস, ধান ছিল তাদের প্রধান ফসল। কার্পাস চাষের প্রথম নিদর্শন সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল তাদের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। মেসোপটেমিয়া, পারস্য এবং মধ্য এশিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত সীলমোহরগুলো মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া গেছে।

সিন্ধু সভ্যতার শিল্পকলা ও কারুশিল্পও ছিল উন্নত। পোড়ামাটির মূর্তি, ব্রোঞ্জের মূর্তি (যেমন “নাচনেওয়ালী মেয়ে”), মাটির পাত্র, সীলমোহর এবং অলংকার তাদের শৈল্পিক দক্ষতার পরিচায়ক। তাদের লিখন পদ্ধতি ছিল চিত্রলিপি (Pictographic script), যা এখনো সম্পূর্ণভাবে পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই সভ্যতার পতনের কারণ সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও, ধারণা করা হয় যে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন বন্যা, নদীর গতিপথ পরিবর্তন) অথবা আর্যদের আক্রমণ এর পতনে ভূমিকা রেখেছিল। সিন্ধু সভ্যতা প্রায় সাতশো বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পরবর্তী সভ্যতাগুলোর ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে এমসিকিউ প্রশ্নপত্র
১. সিন্ধু সভ্যতাকে সাধারণত কোন নামেও অভিহিত করা হয়?
ক) বৈদিক সভ্যতা
খ) গুপ্ত সভ্যতা
গ) হরপ্পা সভ্যতা
ঘ) মহেঞ্জোদারো সভ্যতা
সঠিক উত্তর: গ) হরপ্পা সভ্যতা

২. সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল আনুমানিক কোন খ্রিস্টপূর্ব অব্দের মধ্যে ছিল?
ক) ৩২০০-২৫০০ অব্দ
খ) ২৬০০-১৯০০ অব্দ
গ) ১৫০০-৬০০ অব্দ
ঘ) ৮০০-২০০ অব্দ
সঠিক উত্তর: খ) ২৬০০-১৯০০ অব্দ

৩. সিন্ধু সভ্যতার কোন স্থানটি 'মৃতের স্তূপ' নামে পরিচিত?
ক) হরপ্পা
খ) লোথাল
গ) মহেঞ্জোদারো
ঘ) কালিবঙ্গান
সঠিক উত্তর: গ) মহেঞ্জোদারো

৪. সিন্ধু সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য কোনটি ছিল?
ক) বিশাল মন্দির নির্মাণ
খ) উন্নত নগর পরিকল্পনা
গ) ঘোড়ার ব্যবহার
ঘ) লৌহ শিল্পের বিকাশ
সঠিক উত্তর: খ) উন্নত নগর পরিকল্পনা

৫. সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা কোন ফসলের চাষ প্রথম শুরু করেছিল বলে মনে করা হয়?
 ক) গম
খ) যব
গ) কার্পাস
ঘ) ধান
সঠিক উত্তর: গ) কার্পাস

৬. সিন্ধু সভ্যতায় প্রাপ্ত 'নাচনেওয়ালী মেয়ে' মূর্তিটি কোন ধাতুতে নির্মিত?
ক) সোনা
খ) রূপা
গ) লোহা
ঘ) ব্রোঞ্জ
সঠিক উত্তর: ঘ) ব্রোঞ্জ

৭. সিন্ধু সভ্যতার বাণিজ্যিক সম্পর্ক কোন প্রাচীন সভ্যতার সাথে ছিল?
ক) মিশরীয় সভ্যতা
খ) চীনা সভ্যতা
গ) গ্রিক সভ্যতা
ঘ) মেসোপটেমীয় সভ্যতা
সঠিক উত্তর: ঘ) মেসোপটেমীয় সভ্যতা

৮. সিন্ধু সভ্যতার লিখন পদ্ধতির নাম কী?
ক) হায়রোগ্লিফিক
খ) কিউনিফর্ম
গ) চিত্রলিপি
ঘ) ব্রাহ্মী লিপি
সঠিক উত্তর: গ) চিত্রলিপি

৯. সিন্ধু সভ্যতার পতনের সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে কোনটি উল্লেখযোগ্য?
ক) রোমানদের আক্রমণ
খ) জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
গ) মিশরীয়দের সাথে যুদ্ধ
ঘ) বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান
সঠিক উত্তর: খ) জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

১০. সিন্ধু সভ্যতার কোন স্থানে একটি বিশাল স্নানাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে?
ক) হরপ্পা
খ) লোথাল
গ) কালিবঙ্গান
ঘ) মহেঞ্জোদারো
সঠিক উত্তর: ঘ) মহেঞ্জোদারো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »
Scroll to Top